নাজনীন আলম
চাকুরীর সুযোগ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে! গরীবের পেটে লাথি সবকিছু কি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেই দেখতে হবে ?
দেশে 'স্থায়ী চাকুরী' (parmanent job) হতে বঞ্চিত হচ্ছে গরীব দুঃখী অসহায় এবং পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠী৷ বিভিন্ন বাহিনী ও অন্যান্য কিছু কিছু পদ ছাড়া ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর চাকরীতে ঢোকার সুযোগ কমে যাওয়ায় চরম হতাশায় রয়েছে চাকরী প্রার্থীগণ।
ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ৩য় এবং ৪র্থ শ্রেণীর চাকুরীর ক্ষেত্র এখন একদম সংকোচিত। এসব প্রতিষ্ঠানে ৩য় শ্রেণীর সিংহভাগ পদকে অনেক আগেই ১ম বা ২য় শ্রেণীতে আপগ্রেড করায় রাস্ট্রের খরচও বহুগুনে বেড়ে গেছে। চাকুরীতে ৩য় শ্রেণীর পদ এখন নেই বললেই চলে; আর ৪র্থ শ্রেণীর সিংহভাগ পদে আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে লোকবল নিয়োগের কারণে চাকরীর সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে গেছে৷ গরীবকে শোষণ করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাচ্ছে কিছু আউট সোর্সিং কোম্পানী ও স্বার্থান্বেষী মহল।
অভাব-অনটন, সুযোগ-সুবিধার স্বল্পতা বা অন্য কোন কারণে যদি কেউ একাডেমিক রেজাল্ট খারাপ করে বা বেশীদূর লেখাপড়া করার সুযোগ না পায়, তাহলে মেধাবী হলেও আর রক্ষা নেই; তার জীবনে নেমে আসে চরম অনিশ্চয়তা। একইসাথে ঘটে তাদের বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান এবং পরিবার-পরিজনের ভাগ্য বিপর্যয়, যা অত্যন্ত অমানবিক। ভাল সার্ভিসের অজুহাতে (অনেক ক্ষেত্রে আউটসোর্সিং কোম্পানী হতে পার্টনারশিপ বা অনৈতিক সুবিধা নিয়ে) এ নির্মম কাজটি সরকারি বেসরকারি অফিসের স্বার্থান্বেষী মহল ঠিকই করে যাচ্ছে। জমিদারী কায়দায় নিজেকে জাহির এবং নিজ হুকুমত কায়েম করতে গরীব অসহায় ও নিরিহ আউট সোর্সিং কর্মীদের গোলাম করে রাখা হচ্ছে। এভাবে কিছু স্বার্থপর এবং অবিবেচকদের বিলাসিতার স্বার্থে আউটসোর্সিং কর্মীদের লাইফ বরবাদ হয়ে যাচ্ছে।
ভাল কাজ করলেও আউটসোর্সিং এ নিয়োগ প্রাপ্তরা কোম্পানীর কাছ থেকে বেতনটাও ঠিকমত পায়না।কোম্পানীগুলো কত ভাবেই না খাটায় এই কর্মীদের। বিনা কারণে বা সামান্য অজুহাতে যে কোন সময়ে এদেরকে চাকরীচ্যুত করা হয়। আউটসোর্সিং কোম্পানীর হাতে এরা জিম্মি এবং অসহায়। অনেক ক্ষেত্রেই কৃতদাসের মত আচরণ করা হয়ে থাকে এদের সাথে। কোন কোন কোম্পানী অনেক সময় মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে চাকুরী স্থায়ী হবার প্রলোভন দেখিয়ে সহজ সরল এই কর্মীদের বিভিন্ন সরকারি/বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি দিয়ে থাকে। ছয় মাস/এক বছর পর স্থায়ী করা হবে বললেও কোনদিনও এ চাকুরী স্থায়ী হয়না। স্থায়ী হওয়ার আশায় অন্যত্র ভাল চাকুরী খোঁজার সময়-সুযোগ/আগ্রহও থাকে না তাদের। এভাবে ধীরে ধীরে চাকরীর বয়স চলে যাওয়ায় এই হতভাগাদের জীবন হয়ে পড়ে বিষাদময়, বিপর্যস্ত এবং অনিশ্চিত। কেননা, তাদের এই চাকরীর নিশ্চয়তা নেই, পেনশন নেই, বোনাস নেই, গ্রাচুইটি নেই এবং চিকিৎসা-শিক্ষা,-লাঞ্জ বা কোন ধরণের ভাতাও তেমন নেই। আছে শুধু আফিসিয়াল বা ব্যক্তিগতসহ বসের যাবতীয় হুকুম তালিম করার বাধ্যবাধকতা।
মেধা আল্লাহর দান। কম মেধাবীরা প্রতিযোগিতায় পিছিযে থাকবে- এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে তাদের ছোট চাকরীর সুযোগটিও হারিয়ে যাবে তা হতে পারে না। গরীব-দুঃখী অসহায়, পিছিয়ে পড়া এবং কম মেধাবী এই মানুষগুলোরও জীবন আছে, সংসার আছে, ভবিষ্যৎ আছে। তারাও এ দেশের নাগরিক; তাদেরও অধিকার আছে জীবিকা নির্বাহের জন্য যোগ্যতা অনুযায়ী একটি স্থায়ী চাকুরী পাওয়ার। কিন্ত আউটসোর্সিং এর কারণে তাদেরকে এই অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। এমনকি 'স্হায়ী পদে' নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি কমে যাওয়ায় চাকরীর আবেদন করার সুযোগও তারা খুব একটা পাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে ভিটে-মাটি বিক্রি করে জীবিকার সন্ধানে অনেকেই ছুটছে বিদেশে; কেউবা দালাল ও প্রতারকদের খপ্পরে পরে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। এমনকি থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়া এবং আফ্রিকার জঙ্গলে বা বিভিন্ন দেশের কারাগারে অনাহারে অর্ধাহারে বছরের পর বছর মানবেতর জীবন যাপন করছে অসহায় এই মানুষগুলোর অনেকেই। প্রায়ই শোনা যায় জীবিকার আশায় বিদেশে পাড়ি জমাতে গিয়ে নৌযান ডুবে সাগরের পানিতে জীবন প্রদীপ নিভে যাচ্ছে এই হতভাগাদের অনেকেরই।
বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, "বিশ্ব আজ দুই শিবিরে বিভক্ত- শোষক আর শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।" ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় সেখানকার চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের দাবী আদায়ের আন্দোলনে শরিক হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিজে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। এদেশের গরীব-দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটানোই ছিল তার স্বপ্ন। তারই কণ্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা পিতার দেখানো পথে হেঁটে আজ সফলতার স্বর্ণশিখরে। অনিয়ম-দূর্নীতি এবং অসঙ্গতি দূর করতে তিনি কাউকেই ছাড় দিচ্ছেন না।
মানবতার মাতা জননেত্রী শেখ হাসিনা হয়তো জানেন না যে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় এরকম অমানবিকভাবে ৩য়/৪র্থ শ্রেণীর পদে এদেশের গরীব-দুঃখী ও অসহায়ের চাকরীর অধিকার দিন দিন কেড়ে নেয়া হচ্ছে। তাঁর নজরে আসলে নিশ্চয়ই এমনটি হওয়ার কথা না। এভাবে স্থায়ী চাকরী হতে বঞ্চিত করা শুধু অমানবিকই না, অপরাধও বটে। দেখার কি কেউ নেই? সবই কি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেই দেখতে হবে?
সংবিধান, আইন এবং মানবতা বিরোধী আউটসের্সিং বন্ধ করে দেশের সুবিধা বঞ্চিত এবং পিছিয়ে পরা গরীব-দুঃখী ও অসহায়ের জন্য ৩য় এবং ৪র্থ শ্রেণীর সরকারি/বেসরকারি চাকুরীর অধিকার সুরক্ষার ব্যবস্থা করা এখন জরুরী। বালিশকাণ্ড, টেন্ডার বাণিজ্য, কেসিনো কাণ্ড, স্বাস্থ্য বাণিজ্য, বিলাসিতা বা নেশায় জড়িত হতে নয়; শুধুই পেটের তাগিদে দু'মুঠো খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকতে স্থায়ী চাকুরীর পথ যেন বন্ধ না হয়, সে অধিকার চায় এদেশের কোটি কোটি বেকার। খোঁড়া অযুহাতে আউটসোর্সিং এর কারণে তাদের রুটি-রুজী তথা জীবন ধারণের অধিকার যেন আর হরণ করা না হয়।
পিছিয়ে পরা কোটি কোটি ছাত্র, যুবক ও তরুণের আর্তনাদ দূর করতে প্রাতিষ্ঠানিক ৩য় ও চতুর্থ শ্রেণীর চাকুরীতে আউটসোর্সিং বন্ধ করে স্থায়ী চাকরীর বিধান ফিরিয়ে আনা হোক এবং আউটসোসিং মাধ্যমে নিয়োজিতদের চাকরী স্থায়ী করা হোক।
নাজনীন আলম
কার্যনির্বাহী সদস্য
ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগ।